রক্তশূন্যতা দূর হবে 5 টি খাবার খেলেই । রক্তাল্পতা প্রতিরোধের উপায়

 


কীভাবে রক্তশূন্যতা দূর করতে পারেন শুধুমাত্র খাদ্য পরিবর্তন করে

বিশ্ব-জনসংখ্যার আনুমানিক ১৮০ কোটি মানুষ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ২১% শিশু এবং 29% নারী বিভিন্ন মাত্রায় রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। 

আপনি কি সারাক্ষন দুর্বল অনুভব করেন? যদি মনে করেন অল্পস্বল্প কাজ করেই আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন বা হাঁপিয়ে যাচ্ছেন? অথবা কখনো কখনো বুকে ব্যথার মত সমস্যা কখনো মাথা ঝিমঝিম মাথা ঘোরা মাথা ব্যথার মত সমস্যা বা অনেকক্ষণ বসে থাকার পর উঠলে আপনার মাথা ঘুরে যাচ্ছে এই ধরনের সমস্যা যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ভেবে নিতে পারেন যে আপনার শরীরে রক্তস্বল্পতা হয়েছে। তবে ভয় নেই। কারণ

আজকে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে পারবেন কোনো ঔষধ ছাড়া বা  কি খেলে আপনার রক্তস্বল্পতা 1 মাসের মধ্যে দূর হবে? তার আগে জানতে হবে রক্তস্বল্পতা আসলে কি? এবং কি কারনে আমাদের  রক্তস্বল্পতা হয়?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে 5 থেকে 6 লিটার এবং নারীদের 4 থেকে 5 লিটার রক্ত থাকে। সাধারণভাবে যদি কারো রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার হিমোগ্লোবিন অনেক কমে যায় তাহলে আমরা সেটাকে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা বলতে পারি । এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে রক্তের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত বা কিভাবে জানবো আমার রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কতো রয়েছে? এর জন্য আপনার রক্তের হিমোগ্লোবিন টেস্ট বা সিবিসি টেস্ট করতে হবে। এই টেস্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কত?

স্বাভাবিক অবস্থায় একজন পুরুষের  রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ 13.5 থেকে 18 গ্রাম পার ডেসিলিটার থাকে এবং নারীদের ১২ থেকে ১৬ গ্রাম পার ডেসিলিটার থাকে। যদি আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা 12 গ্রাম পার ডেসিলিটার এর কম থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা হয়েছে। 

আর আপনি যদি রক্তের হিমোগ্লোবিন টেস্ট বা সিবিসি টেস্ট ছাড়াই বুঝতে চান যে আপনার রক্তস্বল্পতা হয়েছে কিনা সেক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলো যদি আপনার মধ্যে দেখা  যায়  তাহলেও বুঝতে পারবেন আপনার  রক্তস্বল্পতা হয়েছে যেমন, শরীর ও চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাবে ,বুক ধড়ফড় করবে, সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া এবং ব্যায়ামের পর শ্বাসকষ্ট হওয়া, খাবারে অরুচি ও ক্ষুধামন্দা এবং কাজকর্ম ও পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়া।

এখন আমরা জানবো কেনো রক্তস্বল্পতা হয়?

বিভিন্ন  কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো আয়রন। কোনো কারণে শরীরে আয়রনের উপস্থিতি কমে গেলে রক্তস্বল্পতা হয়। একে বলে আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা। এ ছাড়া ভিটামিন বি12 ও ফলিক অ্যাসিডের অভাবেও রক্ত স্বল্পতা হয়ে থাকে। 

আয়রনের ঘাটতি হওয়ার প্রধান কারণ অপুষ্টি। খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন না থাকলে আয়রনের অভাব দেখা দেয়।

এখন আমরা এমন ৫ টি খাবারের নাম বলবো যেগুলো আপনার শরীরে ন্যাচারালি রক্তস্বল্পতা দূর করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করবে । এবং সেটা সম্পূর্ণ ঔষধ ছাড়াই। 

এই খাবারগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে কালো তিল।

কালো তিল রক্তস্বল্পতা বা আয়রনের অভাবের জন্য খুবই উপকারী। কালো তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, জিংক, ভিটামিন বি সিক্স, এবং প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই এবং ফোলেট থাকে, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন কাউন্টকে বাড়ায় এবং সেটি বুস্ট করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালো তিলকে অবশ্যই রাখবেন। 

নাম্বার 2 কিশমিশ

কিশমিশে প্রচুর পরিমানে আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা রক্তস্বল্পতা (আয়রনের অভাব) দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

রাতের বেলা একগ্লাস  পানিতে আধা মুঠো বা 1 মুঠো কিসমিস ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালবেলা যখন কিসমিসগুলো ফুলে যাবে তখন সেই কিসমিস গুলো এক গ্লাস দুধের মধ্যে 1চামচ পরিমান মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এইভাবে যদি আপনি এক মাস খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ফলে  রক্তস্বল্পতা দূর হয়ে আপনার শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী হবে। 

নাম্বার তিন ডালিম বা বেদেনা

ডালিম এমন একটি ফল যেটি খেলে শরীরে দ্রুত রক্ত তৈরি হয়  এবং ডালিম আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিন এবং লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি করে অ্যানিমিয়ার মত সমস্যা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে থাকে । যেকোনো লাল রঙের ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম ,ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন ই ভিটামিন কে ফাইবার এবং ফুলেট এইসবগুলো উপাদান মিলেমিশে লাল রঙের ফলগুলি আপনার রক্তস্বল্পতার মত সমস্যাকে সমাধান করতে পারে । তাই নিয়মিত এই ফলটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন কারন এটি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে প্রচুর পরিমানে আয়রন বৃদ্ধি পাবে। 

নাম্বার চার:বিট রুট 

বিট রুটের জুস কিন্তু আপনার অ্যানিমিয়ার মত সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম কারণ বিটরুট এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং তার সাথে সাথে রয়েছে ভিটামিন সি ম্যাঙ্গানিজ ফুলেট  এবং ভিটামিন বি১২ এই প্রত্যেকটি উপাদান আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। আর আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে বিটরুটের জুরি নেই। তাই প্রত্যেকদিন চেষ্টা করবেন। অন্তত এক গ্লাস বিটরুটের জুস খেতে। 

নাম্বার 5: গরুর মাংস

আমরা অনেকেই জানিনা গরুর মাংস বা গরুর কলিজা রক্তস্বল্পতা  (আয়রনের অভাব) কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী । এটি রক্তের হিমোগ্লোবিনের স্তর বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্তস্বল্পতা কমায়। গরুর কলিজাতে প্রচুর পরিমানে উচ্চ আয়রন থাকে ফলে এটি  হিমোগ্লোবিনের স্তর দ্রুত বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও গরুর কলিজা ভিটামিন B12 এবং ফোলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা রক্ত উৎপাদনে সহায়ক এবং রক্তস্বল্পতার মোকাবিলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

তবে আপনি যখনই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান না কেন চেষ্টা করবেন সাথে সাথে ভিটামিন সি  খাওয়া যেমন পাতি লেবু কারণ ভিটামিন সি আয়রনকে আপনার শরীরে এবজার্ভ করতে বেশি সহায়তা করে থাকে। ভিটামিন সি আপনার শরীরে যে রক্ত তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া সেটাকেও সাহায্য করে থাকে।

রক্তস্বল্পতা কমাতে নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।

কারন টমেটো তে থাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি । যাদের আয়রনের কারনে রক্তস্বল্পতা রয়েছে তাদের খেত্রে কিন্তু এটি দারুন কাজ করে।পাশাপাশি টমেটোতে বিটা ক্যারোটিন ,ফাইবার ,ভিটামিন ই থাকে যা আপনার রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।  তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন খাদ্য তালিকায় টমেটো রাখতে। 

এছাড়াও সবুজ শাকসবজি পালং শাক, কচু শাক খেতে পারেন কারন এই শাকগুলি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ, যা রক্তস্বল্পতা (আয়রনের অভাব) দূর করতে সাহায্য করে।এই শাকগুলিতে রয়েছে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফোলিক অ্যাসিড,পটাসিয়াম যা শরীরের জন্য খুই  উপকারী এবং রক্তস্বল্পতা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

আপনি যদি উপরের বলা প্রত্যেকটি খাবার নিয়মি 1 মাস খান ইনশাহআল্লাহ আশা করা যায় যে 1 মাস পরে গিয়ে আপনি দেখতে পারবেন যে আপনার রক্তস্বল্পা অনেকাংশে কমে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.