গ্যাস অ্যাসিডিটি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
গ্যাস এসিডিটি মাত্র ৫ সেকেন্ডে বেরিয়ে যাবে । গ্যাস অ্যাসিডিটি থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
প্রথমেই জানতে হবে গ্যাস বা এসিডিটি আসলে কি?
গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হলো পেটের ভেতরের এক ধরনের অস্বস্তি। আমাদের পেটে খাবার হজম করার জন্য অ্যাসিড তৈরি হয়। এই অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে এলে জ্বালাপোড়া, বুক জ্বালা, টক ঢেঁকুর ওঠা ইত্যাদি সমস্যা হয়। কিন্তু যখন এই অ্যাসিড বেশি তৈরি হয় বা পেটের ভেতরে গ্যাস জমে যায়, তখন আমরা অস্বস্তি বোধ করি। একেই গ্যাস বা অ্যাসিডিটি বলে।
পেটে গ্যাসের সমস্যা এখন প্রতি বাড়িতেই রয়েছে। বিশেষত, আমাদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি। গ্যাস সাধারণত তৈরি হয় অন্ত্রে। সকলের শরীরেই গ্যাস তৈরি হয়। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ বার বায়ু বের হওয়া বা পায়ুপথে গ্যাস বের হওয়া স্বাভাবিক।
গ্যাস কেনো হয়?
অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যায় ভোগার কারণ হলো উপকারী ও ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা। আর এটা হয় গ্যাস উৎপাদন করে এমন খাবার খাওয়ার ফলে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন খাদ্য হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত কার্বনেটেড পানীয় গ্রহণ, বা অন্যান্য পাকস্থলীর সমস্যার কারনে এটি হতে পারে। গ্যাসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পেট ফোলাভাব, বায়ু নির্গমন, এবং কখনও কখনও বুকে জ্বালা।
এখন আমরা জানবো গ্যাস ও এসিডিটির সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সর্ম্পকে
1.লেবু পানি পান করুন
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবু মিশিয়ে আপনার দিনটি শুরু করতে পারেন। লেবুর রয়েছে হজমের রসকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা, যা গ্যাস এবং পেট ফাঁপা উপশম করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস হালকা গরম পানি খেলে পাকস্থলীর মিউকাস পরিষ্কার হয় এবং এটি শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে এবং খাবার দ্রুত হজম হয়।
এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস ছেঁকে নিন। ভালো করে নেড়ে নিয়ে সকালে খালি পেটে প্রথমে পান করুন। লেবু হজমের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং এটির হালকা মূত্রবর্ধক প্রভাব রয়েছে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্যাস এবং টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও সকালবেলা কিছু অভ্যাস বা খাবার রয়েছে যেগুলি আপনাকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে যেমন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে চা বা কফি পান করলে পেটে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা বুক জ্বালা ও গ্যাসের কারণ হতে পারে। ক্যাফেইন পাকস্থলীর আস্তরণে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তাই সকালবেলা দ্রুত নাস্তা করতে হবে কারন দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড জমা হয়। তাই সময়মতো হালকা ও স্বাস্থ্যকর নাস্তা করুন।
2. রসুন
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারেন। রসুন পরিপাকতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী উপাদান । অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুনের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।রসুনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা পেটের প্রদাহ কমাতে সহায়ক। এক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললেই স্টমাকে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে।
রসুনে থাকা অ্যালিসিন এবং অন্যান্য সালফার যৌগ হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রেখে গ্যাস ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে । এ ছাড়া দুপুরে ভাতের সঙ্গেও এক কোয়া রসুন খেতে পারেন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন খেলেই গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
3. আদা খান
আদা হজম সমস্যার জন্য বহু যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কাঁচা আদা চিবিয়ে খাওয়া বা আদা চা পান করা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। খাবারের প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেলে বা আদা চা পান করলে হজমে সাহায্য হয় এবং গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা কমে। আদার মধ্যে জিঞ্জেরল (Gingerol) ও শোগাওল (Shogaol) নামক সক্রিয় উপাদান থাকে। এগুলো লালা, পিত্তরস এবং পাকস্থলীর এনজাইম নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে।
হজম ভালো হলে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা কমে যায়।এছাড়াও আদা পাকস্থলীর পেশীগুলোকে সঠিকভাবে সংকুচিত ও প্রসারিত হতে সাহায্য করে। এর ফলে খাবার পাকস্থলীতে বেশিক্ষণ জমে থাকে না এবং দ্রুত অন্ত্রের দিকে চলে যায়। খাবার জমে না থাকার কারণে গ্যাস তৈরি ও অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা (অ্যাসিডিটি) হওয়ার প্রবণতা কমে। এবং আদা অন্ত্রের পেশীগুলোকে শিথিল করতে পারে, যা জমে থাকা গ্যাসকে সহজে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা ভাব কমায়।
কিভাবে আদা খাবেন?
গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে এক টুকরো কাঁচা আদা ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। অল্প লবণ মাখিয়ে খাবারের আগে বা পরে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে পারেন। আর যদি কাঁচা আদা খেতে না পারেন তাহলে আদা ছেঁচে বা গ্রেট করে তার রস বের করে নিন (প্রায় ১ চামচ)। সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং সারাদিনের জন্য গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চাইলে সকালে খালি পেটে আদা পানি বা আদা চা পান করুন।
4. জিরা পানি
জিরা আমাদের রান্নাঘরের একটি প্রধান উপকরণ। এর পাচক উপকারিতা সুপরিচিত। জিরা পানি হজমের সমস্যা, বিশেষ করে গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমাতে ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। জিরাতে থাইমল (Thymol) নামক একটি যৌগ থাকে যা লালা গ্রন্থি, পাচক রস নিঃসরণকারী এনজাইমগুলোকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে খাবার, বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ভালোভাবে হজম হয়। হজম প্রক্রিয়া উন্নত হলে খাবার পেটে জমে গ্যাস তৈরি করতে পারে না। জিরা একটি চমৎকার কার্মিনেটিভ, অর্থাৎ এটি পেট এবং অন্ত্র থেকে জমে থাকা গ্যাস বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে পেট ফাঁপা এবং অস্বস্তি কমে যায়। জিরা পানি শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে, যা অ্যাসিডিটি বা বুক জ্বালার অনুভূতি কমায়।
কখন কিভাবে জিরা পানি খাবেন?
এক মুঠো জিরা এক গ্লাস পানিতে সারা রাতভর ভিজিয়ে রাখুন। সারারাত ভিজিয়ে রাখা জিরা পানি সকালে খালি পেটে পান করলে হজম প্রক্রিয়া সচল হয় এবং এটি সারাদিনের জন্য মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। গ্যাস ও অ্যাসিডিটির প্রবণতা কমাতে এটি খুব কার্যকর। খাওয়ার আগে জিরা পানি পান করলে হজম সহজ হয় এবং গ্যাসের সমস্যা কমে। আর যদি গ্যাস এসিডিটির সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে যায় তাহলে জিরা সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও যখনই গ্যাস, পেট ফাঁপা বা অ্যাসিডিটির লক্ষণ অনুভব করবেন, তখনই এক গ্লাস জিরা পানি পান করতে পারেন। এটি দ্রুত উপশম দিতে পারে।
5. ভাজাপোড়া খাবার পরিহার কতে হবে
ভাজাপোড়া খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা তেল থাকে। ফ্যাট হজম হতে অন্যান্য খাবার (যেমন কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিন) এর চেয়ে বেশি সময় লাগে।ফ্যাট হজম হতে বেশি সময় লাগার কারণে খাবার দীর্ঘক্ষণ পাকস্থলীতে থেকে যায়। এর ফলে পাকস্থলীতে বেশি পরিমাণে অ্যাসিড নিঃসরণ হতে থাকে এবং খাবার পেটে জমে গ্যাস তৈরি হয়। ভাজা খাবারের তেল এবং রান্নার সময় ব্যবহৃত অতিরিক্ত মশলা পাকস্থলীর ভেতরের আবরণে (lining) অস্বস্তি বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা এসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয় তাই ভাজাপোড়া খাবার যেমন, পুরি পরোটা সিঙ্গারা চপ, পিয়াজু বা বিভিন্ন রকম যে তেলে ভাজা আছে আলু ভাজা, এইসবগুলো খাবার পরিহার করতে হবে। এছাড়াও অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবারকেও বর্জন করতে হবে ।
6. একবারে অতিরিক্ত খাবার না খাওয়া
ভাবুন তো, একবারে প্লেটভর্তি খাবার খেলে আপনার পাকস্থলীর কী অবস্থা হয়? বেচারা অতিরিক্ত চাপে দিশেহারা হয়ে পড়ে, এর ফলে, পাকস্থলী এবং খাদ্যনালীর সংযোগস্থলে থাকা ভালভ যা খাবার ও অ্যাসিডকে পাকস্থলীতে আটকে রাখার কথা, সেটি অতিরিক্ত চাপের কারণে ঠিকমতো বন্ধ হতে পারে না। তখন পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে এসে বুক জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটির অস্বস্তি তৈরি করে।", এই বিশাল ভোজ হজম করতে গিয়ে বেশি অ্যাসিড তৈরি হয় আর হজমেও লাগে দীর্ঘ সময়, যা গ্যাস আর পেট ফাঁপার অস্বস্তি ডেকে আনে।
এর বদলে, যদি অল্প অল্প করে কয়েকবারে খান, তাহলে পাকস্থলী থাকে একদম শান্ত ও চাপমুক্ত, অ্যাসিড তৈরি হয় পরিমিত, আর হজমটাও হয় ঝটপট ও মসৃণ। ফলে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে আর আপনি থাকতে পারেন অনেক বেশি হালকা ও প্রাণবন্ত!
7. রাতে দ্রুত খাবার খান
রাতের ঘুমটা যদি শান্তিতে চান, যদি বিদায় জানাতে চান বিরক্তিকর গ্যাস, অ্যাসিডিটি আর বুকজ্বালার মতো অস্বস্তিকে, তাহলে একটা ছোট্ট কিন্তু দারুণ কার্যকর উপায় আছে। আপনার রাতের খাবারটা শেষ করুন ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত 2 থেকে 3 ঘন্টা আগে । কারন খাবার খাওয়ার পর আমাদের পাকস্থলী অ্যাসিড এবং এনজাইম নিঃসরণ করে খাবার হজম করার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই প্রক্রিয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন।
যদি খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া হয়, তাহলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে বা ব্যাহত হতে পারে। যখন আমরা বসে থাকি বা দাঁড়িয়ে থাকি, তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খাবার এবং পাকস্থলীর অ্যাসিডকে নিচে রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়লে, মাধ্যাকর্ষণের এই সুবিধা পাওয়া যায় না।
ভরা পেটে শুয়ে পড়লে পাকস্থলীর অ্যাসিড এবং আধা হজম হওয়া খাবার খাদ্যনালীর দিকে উঠে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়। একে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলে, যার ফলে বুক জ্বালা গলা জ্বালা এবং অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা হয়। তাই, রাতের খাবার ঘুমের অন্তত 2 থেকে 3 ঘন্টা আগে শেষ করুন তাহলে দেখবেন পাকস্থলী থাকবে শান্ত, ঘুম হবে গভীর আর সকালটা শুরু হবে একদম ফুরফুরে মেজাজে, কোনও অস্বস্তি ছাড়াই!
8. অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার করুন
ভাবুন তো, আপনার পেটটা যেন একটা শান্ত পুকুর, আর অ্যালকোহল ও ধূমপান সেই পুকুরে ঢিল ছোড়ার মতো কাজ করে! অ্যালকোহল সরাসরি পেটের নরম আবরণে ধাক্কা মারে, অ্যাসিডের বন্যা বইয়ে দেয়, আর খাদ্যনালীর দরজাকেও আলগা করে ফেলে, ফলে সবকিছু যেন উপচে পড়তে চায় ।
অ্যালকোহল পাচনতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং পেটের অম্ল নিঃসরণ বাড়ায়। এটি পেটের অভ্যন্তরীণ আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে এসিডিটি বৃদ্ধি পায়। অ্যালকোহল পানের ফলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত অ্যাসিড খাদ্যনালীতে উঠে এসে বুক জ্বালা ও অ্যাসিডিটির সৃষ্টি করে ।
এই অ্যালকোহল ও ধূমপান নিয়মিত করার কারনে গ্যাস আর অ্যাসিডিটির অস্বস্তি যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, এই অশান্তিকে শান্ত করার উপায়ও আছে। প্রথমত, পুকুরে ঢিল ছোঁড়া বন্ধ করতে হবে, অর্থাৎ অ্যালকোহল ও ধূমপানকে বিদায় জানাতে হবে। এরপর খাবারের নিয়মে বদল আনা, কিছু খাবার এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার মাধ্যমে আপনি সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
9. প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন
এসিডিটির মূল কারণ হলো পাকস্থলীতে উৎপন্ন হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা এর ভারসাম্য নষ্ট হওয়া। পানি পান করলে এই অ্যাসিড পাতলা হয়ে যায়। ফলে এর তীব্রতা কমে এবং পাকস্থলীর ভেতরের আস্তরণে বা খাদ্যনালীতে উঠে এসে যে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি তৈরি করে, তা হ্রাস পায়। এছাড়াও পানি আপনার পাকস্থলীর অতিরিক্ত অ্যাসিডকে অনেকটা নিস্তেজ করে দেয়, ঠিক যেন আগুন নেভানোর মতো, ফলে কমে যায় অ্যাসিডিটির জ্বালা।
পর্যাপ্ত পানি সঠিক হজমের জন্য অপরিহার্য। পানি খাদ্যকে ভাঙতে এবং খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণ করতে সাহায্য করে। হজম প্রক্রিয়া যদি ধীরগতির হয় বা ঠিকমতো না হয়, তাহলে খাদ্য পাকস্থলীতে বেশি সময় ধরে থাকে এবং গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখে, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে
এছাড়াও, পানি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, যা পেটে গ্যাস তৈরির মূল কারণগুলোকেই রুখে দেয়। তাই সুস্থ থাকতে আর পেটের সমস্যায় না ভুগতে, সারাদিন নিয়ম করে 7-8 গ্লাস পানি পান করুন আর থাকুন একদম ফ্রেশ!"
10. দই খাওয়া
দই গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা উপশমে একটি অত্যন্ত উপকারী খাবার হিসেবে পরিচিত। এর প্রধান কারণ হলো দইতে থাকা প্রোবায়োটিকস বা উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা আমাদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এই ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলি অন্ত্রে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায় এবং খাবারের সঠিক হজমে সহায়তা করে, ফলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা বদহজমের মতো সমস্যা হ্রাস পায়। এছাড়াও, দইয়ের শীতল প্রভাব পাকস্থলীর ভেতরের জ্বালা বা অস্বস্তি কমাতে পারে, যা অ্যাসিডিটির সময় আরাম দেয়।
গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে দই খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো দুপুরের খাবারের পর। এই সময়ে দই খেলে তা খাবার হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে এবং পেট ঠান্ডা রাখে। তবে, ভালো ফল পাওয়ার জন্য চিনি ছাড়া বা কম মিষ্টিযুক্ত সাদা টক দই বেছে নেওয়া উচিত এবং পরিমিত পরিমাণে খাওয়া জরুরি। অনেকের মতে, রাতে বা খালি পেটে দই খাওয়া কারও কারও জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই এই সময়গুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় যা আপনাকে 5 সেকেন্ডেই গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে
গ্যাস ও অ্যাসিডিটির আকস্মিক অস্বস্তি থেকে খুব দ্রুত আরাম পেতে একটি অত্যন্ত কার্যকর ঘরোয়া উপায় হলো জোয়ান ব্যবহার করা। এজন্য, প্রায় আধা চা চামচ পরিমাণ শুকনো জোয়ান মুখে নিয়ে ভালোভাবে চিবিয়ে নিন; এতে এর ভেতরে থাকা থাইমলসহ সক্রিয় উপকারী উপাদানগুলো দ্রুত মুখের লালার সাথে মিশে গিয়ে পেটে পৌঁছে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করতে পারে।
ভালোভাবে চিবানো হয়ে গেলে এটি গিলে ফেলুন এবং এরপর এক ঢোক বা সামান্য হালকা গরম পানি পান করুন, যা জোয়ানের কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দেবে এবং পেটে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করবে। এই সহজ পদ্ধতিটি অনুসরণ করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পেটের জমে থাকা গ্যাস বেরিয়ে যেতে শুরু করে, পেট ফাঁপা ভাব কমে আসে এবং অ্যাসিডিটিজনিত জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি থেকে দ্রুত মুক্তি মেলে, যা আপনাকে স্বস্তি এনে দেয়।
যদি আপনার গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা খুব বেশি বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
কোন মন্তব্য নেই